Header Ads

Study abroad in Spain

সাভারে পুলিশ পরিচয়ে অটোরিকশা আটক করে টাকা আদায়

 সাভারে পুলিশ পরিচয়ে অটোরিকশা আটক করে টাকা আদায়


শিল্পাঞ্চল সাভারে মানুষের ঘনত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অপরাধী চক্র। পুলিশ পরিচয়ে অটোরিকশা নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো চক্রও রয়েছে। রিকশাচালকরা পড়াশোনা না জানায় পুলিশ আর অপরাধী চক্রের পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। ফলে টাকা দিয়ে তারা সেই অটোরিকশা ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। এমন চক্রেরই ফাঁদে পড়েছিলেন আত্মহননকারী রিকশাচালক নাজমুল। এমনটাই ধারণা করছেন নাজমুলের স্ত্রী ও গ্যারেজ মালিক। 

সোমবার (১১ এপ্রিল) সাভারের রেডিও কলোনি এলাকার রিকশাস্ট্যান্ড ও নাজমুলের ভাড়া বাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো নাজমুল সকালে গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়ে রেডিও কলোনি রিকশা স্ট্যান্ডে যান। সেদিন কে বা কারা তার রিকশাটি নিয়ে যান। পরে তার স্ত্রী নাজমাকে ফোন করে রিকশা পুলিশ নিয়ে গেছে জানিয়ে বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করেন নাজমুল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রেডিও কলোনি রিকশাস্ট্যান্ডে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে রিকশা নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় একটি চক্র। প্রায় দুই মাস আগে এমন একটি চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে সাভারের সিআরপি রোডের রাজু গ্যারেজে নিয়ে যান রিকশাচালকরা। পরে তাদের মারধর করে ছেড়ে দেন তারা। 

সিআরপি রোডের গ্যারেজ মালিক মো. রাজু মিয়া বলেন, এই স্ট্যান্ডে একটি চক্র আছে। তারা যাত্রী সেজে রিকশায় উঠে কিছু দূর গিয়ে বলে- হাইওয়ে থানায় চল। তখন রিকশাচালকরা যেতে চান না। পরে তাদের টাকা-পয়সা দিয়ে রিকশাটি নিয়ে চলে আসে। টাকা না দিলে দুই পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। এমনকি মারধরও করে চক্রটি। প্রায় দিনই এমন ঘটনা ঘটায় তারা। একদিন আমার গ্যারেজের এক রিকশায় উঠে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দুইজন। পরে রিকশা দ্রুতগতিতে চালিয়ে আমার গ্যারেজে নিয়ে আসে চালক। তাদের চালকরা মারধর করে। পরে থানার ঝামেলা এড়াতে কমিউনিটি পুলিশ মামুনের জিম্মায় ছেড়ে দেই।

রেডিও কলোনি আমতলা এলাকার রিকশা গ্যারেজের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নাজমুল ৯ দিন আগে আমার গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে চালানো শুরু করে। এর দুই দিন পরই তার রিকশা পুলিশ নিয়ে যায়। পরে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে রিকশাটি ছাড়িয়ে নিই। এর ছয় দিনের মাথায় রিকশাটি আবার কে বা কারা নিয়ে যায়। রিকশা যদি পুলিশ নিত, তাহলে মামলার টাকা দিলেই ছেড়ে দিত। পুলিশ রিকশা নিলে চালকের নাম মোবাইল নম্বরসহ একটি স্লিপ রিকশা চালককে দিয়ে একটি স্লিপ নিয়ে যায়। আমার সঙ্গে নাজমুলের দেখা হয়নি। তার কাছ থেকে কোনো স্লিপ পাওয়া যায়নি।

এমনকি হাইওয়ে থানা ও ড্যাম্পিং স্টেশনে গিয়েও ওই রিকশা পাওয়া যায়নি। আমার ধারণা রিকশাটি কোনো চক্র নিয়ে গেছে। সে আমাকে কোনো জবাব দিতে পারবে না বলে হতাশায় আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছি। 

তিনি বলেন, রিকশাচালকরা তো শিক্ষিত নয়। তাই পুলিশের আইডি কার্ডও দেখার সাহস পায় না। এই সুযোগটি নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটি রেডিও কলোনি ও শিমুলতলা রিকশা স্ট্যান্ডে বেশ সক্রিয়।

আত্মহননকারী নাজমুলের স্ত্রী নাজমা বলেন, ঘটনার দিন নাজমুল আমাকে ফোন করে বলে তার রিকশা পুলিশ নিয়ে গেছে। আমি ওকে বলি বাসায় যাও। পরে রিকশা ছাড়িয়ে নিব। বাসায় গিয়ে আমার শ্বশুরের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে গ্যারেজে যাই। সেখান থেকে বাসায় ফিরে দেখি নাজমুল আত্মহত্যা করেছে। হাইওয়ে থানায় খোঁজ নিয়ে দেখি পুলিশ রিকশা নেয়নি। আমার মনে হয় রিকশা হারিয়ে ফেলেছিল নাজমুল। নাজমুল নিয়মিত গাঁজা খেতো, মাথায়ও হালকা সমস্যা ছিল। এর আগেও দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল নাজমুল।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, আমরা ওই দিন রেডিও কলোনি স্ট্যান্ড থেকে কোনো রিকশা আটক করিনি। তাছাড়া এমন চক্রের বিষয়টি আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমরা বিষয়টি নিয়ে আজ থেকেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল সাভারের রেডিও কলোনি রিকশা স্ট্যান্ড থেকে নাজমুল নামে এক চালক তার রিকশা হারিয়ে ফেলেন। পরে বাসায় গিয়ে তিনি আত্মহত্যা করলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি  হয়।


No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.