ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম নিউমার্কেট এলাকা
ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম নিউমার্কেট এলাকা
পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বিপনীবিতান ও শপিং মল। মানুষের ভিড় আর জমজমাট উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে দুই বছর পর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে এখানকার কেনাকাটা। তাছাড়া এখন নেই কোনো বিধি-নিষেধে। তাই মার্কেট থেকে ফুটপাত সব জায়গাতেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে বিধি-নিষেধ থাকায় এবং গাড়ি চলাচল সীমিত থাকায় ব্যবসার পুঁজি হারিয়েছেন অনেকেই। কারণ ঈদ, রোজা, পূজা, পহেলা বৈশাখে দোকান পূর্ণ সময় খোলা রাখা সম্ভব হয়নি। এসব উৎসব ঘিরে যে প্রস্তুতি ছিল সেগুলোর কিছুই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। তবে এ বছর সেই চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। রোজার শুরু থেকেই মার্কেটে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি।
তারা বলেন, পহেলা বৈশাখ, বৈসাবি, বাসন্তী পূজা, মহাবীর জয়ন্তী, চৈত্র নবরাত্রি, অন্নপূর্ণাসহ অন্যান্য উৎসবের জন্য পাইকারি মার্কেট এতদিন যথেষ্ট বেচা কেনা হয়েছে। সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাইকারি শাড়ি, থ্রি-পিস, হিজাব, ওড়না, ছোট বাচ্চাদের পোশাকের বেচাকেনাও এখন চলছে। তবে আগামীকাল পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে পাইকারি দোকানের তুলনায় ভিড় বেড়েছে খুচরা কাপড়ের দোকানে। এরমধ্যে বৈশাখ বরণে সাদা, লাল, নীল শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আবার এসব শাড়ির অধিকাংশ ক্রেতাই তরুণী।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে বৈশাখ উপলক্ষে শাড়ি কিনতে দেখা গেল দুই বোন তানিয়া ও তন্নীকে। বৈশাখ বরণে সাদা ও লাল শাড়ি পছন্দ করেছেন তারা। তবে অন্য সময়ের তুলনায় দাম বেশির অভিযোগ করে তন্নী বলেন, গতবার করোনার প্রভাব বেশি থাকায় বাসা থেকে বের হওয়া হয়নি। এ বছর আর তেমনটি নেই। তাই বৈশাখ বরণে শাড়ি কিনতে এসেছি। তবে দাম কিছুটা বেশি। এক দোকান থেকেই জিনিস কেনা যাচ্ছে না। দুই তিন দোকান ঘুরে বাজেট মিলিয়ে পছন্দের শাড়ি কিনতে হচ্ছে।
সাবিকুন্নাহার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে মানুষের উপস্থিতি ও ভিড় বাড়ে। তাই আগেভাগেই কেনাকাটা করে নিচ্ছি। মনে করেছিলাম এখন ভিড় হবে না। কিন্তু এখন দেখছি অনেক বেশি ভিড়। মূলত কাল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেও অনেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন।
ক্রেতা টানতে আবার একদাম, মূল্যছাড়সহ নানা অফার দিতেও দেখা গেছে অনেক দোকানে।
শুধুমাত্র মূল দোকানগুলোতেই নয় বরং ফুটপাতজুড়েও পা ফেলার জায়গা নেই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় শখানেক বেশি ভ্রাম্যমাণ হকার বসেছে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত। এসব অস্থায়ী দোকানে শাড়ি, চুড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ট্রাউজার, শিশুদের কাপড়, রান্না সামগ্রীসহ অসংখ্য পণ্যের সমাহার।
জহিরুল ইসলাম নামের এক ভ্রাম্যমাণ দোকানি বলেন, বেচাকেনা খুব বেশি ভালো না। আবার মন্দ বলা চলবে না। তবে ঈদ সামনে রেখে নিয়মিত বসতে পারলে আমরা কিছুটা লাভবান হব।
অপরদিকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় থানা পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহেব আলী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেট এলাকায় মানুষের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। এসব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিউমার্কেট থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। আমরা তিন শিফটে ডিউটি করছি। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা, দুপুর দুইটা থেকে রাত দশটা এবং রাত দশটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
No comments