পুলিশের লাথিতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
পুলিশের লাথিতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
লালমনিরহাটে পুলিশের মারা লাথিতে পোশাক শ্রমিক রবিউল ইসলাম খান (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপারেশন) আতিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের এ কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, আদালত পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ সুপার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দিনগত রাতে সদর থানা পুলিশের হেফাজতে সদর হাসপাতালে মারা যান রবিউল ইসলাম খান (২৪)।
মৃত রবিউল সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজিচওড়া গ্রামের দুলাল খানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাংলা বাজার এলাকায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। সেখানে এলাকাবাসী জুয়ার আসর বসালে পুলিশ খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় রবিউল ইসলাম সন্তানের জন্য খেলনা নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। অভিযানকালে রবিউল ইসলাম খানসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ।
রবিউল জুয়া খেলেননি এমন দাবি করে পুলিশভ্যানে উঠতে আপত্তি জানালে পুলিশের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু পুলিশ মারধর করে এক পর্যায়ে তাকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় তাকে লাথি দেন বলে পরিবার অভিযোগ তুলেছেন। এতে পুলিশ ভ্যানেই তার মৃত্যু হয়েছে রবিউলের। পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নাটক করেছে বলে পরিবারের দাবি।
পুলিশের ভাষ্য মতে, রবিউল পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রবিউলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। তাকে রংপুর পাঠানোর প্রস্তুতিকালে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিনি মারা যান।
এদিকে, রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতেই মহেন্দ্রনগর বাজারে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে অভিযুক্ত সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হালিমের শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশ ভ্যানে হামলা ও ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। সারারাত সেখানে এলাকাবাসী যান চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করেন। পরদিন একই দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে একই স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে রবিউলের হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের কঠোর শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
অবশেষে অভিযুক্ত সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হালিমকে দুপুরে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী।
ঘটনা তদন্তে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপারেশন) আতিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিহত রবিউলের বাবা দুলাল খান বলেন, পুলিশের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা কতটুকু ন্যায় বিচার পাব? তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই থানায় নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারলে মৃত সন্তানের আত্না শান্তি পাবে। ন্যায় বিচার পেতে সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ দিকে শনিবার (১৫ এপ্রিল) নিহত রবিউলের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি ঘটনাটি তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, রবিউলের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments