অন্যান্য দেশকে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ
অন্যান্য দেশকে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই দেশটি খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। সারা পৃথিবীতে আমরা খাদ্যের ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। হয় খাদ্য আমদানি করতে হতো অথবা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে হতো।
তিনি বলেন, এই সিলেটের একজন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, যিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন বেশি ধান উৎপাদন করার দরকার নেই। ধান উৎপাদন করলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাব, তখন বিদেশি সাহায্য পাব না। একজন অর্থমন্ত্রী কী করে বললেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আমরা বিদেশি সাহায্য পাব না।
শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জ সদরে বাহাদুরপুরের দেখার হাওরে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন শেষে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। শতাধিক কৃষক এই মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে আপনাদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জাতিকে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খাদ্যে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবেন, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াবেন, সকল ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন, সকলের জন্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন ও সকলের জন্য ঘরবাড়ি দেবেন। গত ১৩ বছরে তিনি সকল প্রতিশ্রুতি প্রায় বাস্তবায়ন করেছেন।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ এখন আর খাদ্যে ঘাটতির দেশ নয়। এই দেশের খাদ্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে হয় না। বরং অন্যান্য দেশকে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে এই দেশ। বাংলাদেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নয়ন হয়নি। বহু অবকাঠামোর উন্নয়ন আমরা করেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের এক মহাসড়কে। এই বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের জন্য নন্দিত, প্রশংসিত। এটা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
বাইরের দেশকে সহযোগিতার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর আগে নেপালের কাঠমন্ডুতে ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের সময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫ হাজার টন চাল সাহায্য দিয়েছেন নেপালকে। শ্রীলংকায় আমরা ৫০ হাজার টন চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দিয়েছিলাম। এটিই আজকের বাংলাদেশ।
হাওর সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, যারা হাওর এলাকায় আসেননি তারা কোনো দিন টেলিভিশন দেখে হাওরের রূপ উপলব্ধি করতে পারবেন না। যখনই হাওরে আসি দেখি থৈ থৈ করা পানি, দিগন্তভরা মাঠ, সবুজ শ্যামল ধানক্ষেত। এই মুহূর্তে ধান পাকছে। আমরা বলি বাংলা মায়ের মুখে হাসি সোনালি ধানের শীষে। ধানের শীষেই মায়েদের মুখে হাসি ফোটে। আবার এই হাওর এতোই ঝুকিপূর্ণ অনেক সময় ডুবে যায়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্ষাকালে আমাদের হাওরের ঝকঝকে মিঠা পানি দেখতে খুবই ভালো লাগে। পাশাপাশি এখন আমরা উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছি। বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রী হিসেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একটু উৎকণ্ঠা, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সুনামগঞ্জে দুই লাখ হেক্টর জমির ওপরে ধান হয়। এই ধান সারা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বিরাট অবদান রাখে। এই ধান যদি নষ্ট হয়ে যায় সারা বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে বিরাট রকমের প্রভাব পড়বে।
দিরাইয়ের পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া চাপতির হাওর সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে বাঁধটি ভেঙে গিয়েছে সেখানেই প্রায় ১২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ফসল সম্পূর্ণ পানির নিচে চলে গেছে। একটা সমুদ্রের রূপ নিয়েছে এখন। এটি আমাদের জন্য দুঃশ্চিন্তার। এই উৎকণ্ঠার মাঝে আমরা এসেছি। আজকেও খবর আছে যে পানি বাড়ছে। তবে জেলা প্রশাসক বলেছেন আগামীকাল থেকে পানি কমে যাবে।
এ সময় সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান মিসবাহ, গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা খানম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজির আলম, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments