টিসিবির কার্ড পেলেন উপসচিবের বাবা!
টিসিবির কার্ড পেলেন উপসচিবের বাবা!
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সরকারি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী তালিকায় এক উপসচিবের বাবাসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। এছাড়া ইউপি সদস্যদের বাবা, ছেলে, বোনসহ সচ্ছল আত্মীয়স্বজনের নামও তালিকায় আছে।
স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে উপকারভোগী হিসেবে তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হয়নি।
সুবিধাবঞ্চিতরা অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা রাজনৈতিক লেবাসধারী, ভোটার ও তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো আত্মীয়স্বজন ও নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে টিসিবির ফ্যামেলি কার্ড করেছেন। এতে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সুবিধাবঞ্চিতদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদের স্বজন ও আস্থাভাজন লোকজনকে তালিকাভুক্ত করেছেন। হতদরিদ্রদের নাম না দিয়ে সরকারের এক উপসচিবের বাবা, এলাকার বিত্তশালী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, দ্বিতল ভবনের মালিক ও ব্যবসায়ীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিতরণের নামের তালিকায় রয়েছেন ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর ভানুবিল গ্রামের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রদীপ কুমার সিংহের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহ। তার পাকা বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তির পণ্য নিয়েছেন তিনি।
একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে ধান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, বাবা জহুর উল্যা ও ভাই এরফান আলীর নাম রয়েছে টিসিবির উপকারভোগী তালিকায়। ইউপি সদস্য গফুর মিয়ার দুই ছেলে ফ্রান্স ও দুবাই প্রবাসী।
আদমপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী কীর্তিজিত সিংহ, উত্তর ভানুবিল গ্রামের বিত্তশালী মো. গনু মিয়া নামও রয়েছে তালিকা। গনু মিয়ার দ্বিতল বাড়ি রয়েছে। তার তিন ভাই প্রবাসে থাকেন।
৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিমের ছেলে ফাহাদ আলী, মেয়ের জামাই জুবের মিয়া ও বোন সাহেদা আক্তারের নামও রয়েছে টিসিবির তালিকায়।
স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর ফারুকের বিরুদ্ধে। সচ্ছল হয়েও ছেলে শামসুল আলম শুভর নাম দিয়েছেন তালিকায়।
টিসিবির তালিকায় সংরক্ষিত নারী সদস্য গুলনাহার বেগমের ভাই ও স্বজনদের নামও রয়েছে। একইভাবে ৩নং ওয়ার্ডের অধিবাসী আদমপুর বাজারের ওয়ালটন টিভি শোরুমের মালিক যুবলীগ নেতা মইনুল ইসলামের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী সাদেক হোসেন, তাজউদ্দিন আহমেদ তাজু ও জসিম উদ্দিন বাদশা বলেন, তালিকা তৈরিতে আরও যাচাই-বাছাই ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল। দরিদ্ররা পেলে উপকার হতো।
৭নং ওয়াডের্র ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর টিসিবির তালিকায় উপসচিবের বাবার নাম, নিজের ছেলে, বাবা ও ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আসলে আমি এতসব বুঝিনি। আমার ভুল হয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ রকম আর হবে না। চেয়ারম্যানকে বলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেব।
আরেক ইউপি সদস্য আজিম মিয়া বলেন, দরিদ্র অনেকে টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় সচ্ছলদের নাম দিতে হয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অনিয়ম পছন্দ করি না। মেম্বারদের তালিকায় কিছুটা স্বজনপ্রীতি হয়েছে। আমি সচ্ছলদের নাম কেটে দেব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, আমি জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা অনুয়ায়ী কার্ডে স্বাক্ষর করেছি, কারা সচ্ছল তা জানি না। এ রকম হলে চেয়ারম্যানকে বলে দেব নাম কেটে দেওয়ার জন্য।
No comments