Header Ads

Study abroad in Spain

চামড়াজাত প‌ণ্যের দাম ৩০ ভাগ কম পাচ্ছে বাংলা‌দেশ

 চামড়াজাত প‌ণ্যের দাম ৩০ ভাগ কম পাচ্ছে বাংলা‌দেশ


‌বি‌শ্বের অন্যান্য দে‌শের মতো সমমা‌নের পণ্য তৈ‌রি ক‌রেও রপ্তা‌নি‌তে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম কম পাচ্ছে দেশীয় উৎপাদনকারীরা। কমপ্লায়েন্সের অভাব দে‌খি‌য়ে মূল্য কম দি‌চ্ছে আন্তর্জা‌তিক ক্রেতা প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো।

এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে চামড়া শি‌ল্পের প্রধান সমস্যা হিসা‌বে কমপ্লায়েন্সের অভাব‌কে চি‌হ্নিত ক‌রে‌ছে খাত সংশ্লিষ্টরা। তা‌দের ম‌তে, কমপ্লায়েন্সের অভাবে এ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য দাম কম পাচ্ছে। আবার স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব যদি এ খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা যায়। তাই শিল্প মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে চামড়া খাত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (৩১ মে) দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক ওয়েবিনারের বক্তারা এমন মতামত দিয়েছেন। ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব বিষয়ে র‌্যাপিড একটি গবেষণা করেছে। ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

‘ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, চামড়া খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ঠিকমত পরিচর্চা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন রপ্তানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ইউরোপিয়ান, ইতালিয়ান ও ভারতীয় কোম্পানি আসছে। কিন্তু কারোর কাছ থেকে সমাধানের ভালো প্রকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার নায্যমূল্য নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ। কোরবানির সময় চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সে দাম পান না।

সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের সিইটিপি আর এখনকার সিইটিপি আলাদা। সিইটিপির ১০৯টি নজেলের কেমিক্যাল নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি মডিউল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। আগের তুলনায় সিইটিপির কমপ্লায়েন্স অনেক ভালো। আগামীতে আরও ভালো হবে। রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। 

হাজারীবাগকে রেড জোন থেকে বের করার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে শিল্প সচিব বলেন, হাজারীবাগে বাই প্রডাক্ট করার সুযোগ রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হবে, রপ্তানি আয় হবে। এজন্য নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ রকম সময়ে চামড়া পণ্যের বাজারে নিজেদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজস্ব কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও কমপ্লায়েন্সের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কাঁচা চামড়ার রপ্তানি কমেছে ৭৯ শতাংশ। আর ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি বেড়েছে ৮০ ভাগ। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ খাতে যেসব নীতিমালা নেওয়া হয়েছে সেগুলো ঠিকমত বাস্তবায়ন হয়নি। 

তিনি হাজারীবাগ থেকে রেড জোনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলেন, একা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চামড়া খাত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। শ্রম ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ গবেষণার ফলাফল মূল প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু এখন শুধু প্রবৃদ্ধি বা মাথাপিছু আয় নয়, এর পেছনের পরিস্থিতিগুলোর উন্নতি দরকার। করোনার সময়ে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটি কাজে লেগেছে। 

তিনি বলেন, চামড়া খাতে ভালো না করার একমাত্র কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্সের অভাব। পরিবেশগত, সামাজিক ও মানের দিকে জোর দিতে হবে। কমপ্লায়েন্স না হওয়ার কারণে দেশের পণ্যমূল্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম পাচ্ছে। চামড়া খাতের সমস্যা আগে থেকে চিহ্নিত। এর সমাধানের উদ্যোগ দরকার। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ব্যবস্থাপনার কার্যকর ও দক্ষ উদ্যোগ দরকার।

তিনি বলেন, চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি। উদ্যোক্তারা আর্থিক সহায়তার চেয়ে নীতি সহায়তা বেশি চান। হাজারিবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।  

তিনি বলেন, করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এ খাত আশানুরূপ সুবিধা পায়নি। চামড়া খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। এই ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানাই সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে ওইসব কারখানা প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। একটা ম্যাপিং করে এগোনো গেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। তবে এজন্য কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে সময়মত বাস্তবায়ন করতে হবে। চামড়া খাতের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকার চামড়া খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করছে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, চামড়া খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য এ খাতকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা উচিত। সামষ্টিকভাবে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এটা দূর করার উদ্যোগ দরকার।

ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। আর সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.