কুতুবদিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুতুবদিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুতুবদিয়ায় সুমি আকতার (২১) নামে এক গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে। গত ১৮ই মে নিহত সুমির বাবা আকতার হোছাইন বাদী হয়ে নিহত সুমির স্বামী ছরোয়ার আলমকে প্রধান আসামী করে কুতুবদিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়্যাল মাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি (সি.আর-১৭৭/২২ইং) দায়ের করেন। বাকি আসামীরা হলেন, নিহতের শ্বশুর তাজুল ইসলাম (৫২), একই এলাকার মৃত গোলাম রহমানের ছেলে নুরুল হোছাইন (৪০), আব্দুল কাদেরের ছেলে মোঃ আনচার (৪০) ও নুুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ সায়েম (২৫)। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাব-১৫ কে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৯ সালে উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের ফুড়ার পাড়া এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে ছরওয়ার আলমের সাথে একই ইউনিয়নের মদন মিয়াজির পাড়ার আকতার হোছাইনের একমাত্র মেয়ে সুমির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে স্বামী ছরোয়ার আলম মাদকাসক্ত হয়ে সুমিকে যৌতুকের দাবীতে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাত। সুমির পিতা মেয়ের সুখের আশায় চাহিদা মত টাকা পয়সা দিতে পারলে নির্যাতন কিছুদিনের জন্য থেমে যেত। কয়েকদিন যেতে না যেতেই টাকার জন্য পুনরায় পাশবিক নির্যাতন চালাতো পাষণ্ড স্বামী। হতাকান্ডের ঘটনার এক বছর আগে ছরোয়ার আলম যৌতুকের দাবীতে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের একপর্যায়ে সুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সুমিকে পুকুর পাড়ে রেখে পালিয়ে যায় ছরোয়ার। পরে প্রতিবেশীরা সেখান থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমিকে উদ্ধার করে। মামলা সূত্রে আরো জানা গেছে, বেশ কয়েকবার ঘাতক স্বামী গৃহবধু সুমিকে যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন করে বাপের বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের মধ্যস্থতায় শ্বশুরের জিম্মায় পুনরায় সংসারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ, হত্যাকান্ডের ঘটনার এক সপ্তাহ আগে অভিযুক্তরা সুমিকে যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের পর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গত ১৪মে সকালে ছরওয়ার শ্বশুর বাড়ি এসে সুমিকে নিয়ে যায়। সুমির বাবা যৌতুকের টাকা দিতে ব্যার্থ হওয়ায় আসামীরা একত্রিত হয়ে গৃহবধু সুমিকে মারধরের একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে এ হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার জন্য অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে সুমিকে গলায় ওড়না দিয়ে ঘরের চালের সাথে ঝুলিয়ে রেখে দরজার ভেতর থেকে খিল লাগিয়ে ঘরের বেড়া কেটে বের হয়ে যায় বলে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়। নিহত গৃহবধূ সুমি এবং ছরওয়ার দম্পতির নাফি নামে আড়াই বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তাছাড়া নিহত সুমি ৪ মাসের অন্তঃসত্তা ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ফুডার পাড়া এলাকা থেকে গৃহবধূ সুমির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সুমির বাবা বলেন, সুমি চার ভাইয়ের এক বোন। সে আত্মহত্যা করেনি, পাষণ্ড স্বামীসহ অপরাপর আসামীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। নিহতের স্বজনেরা জানান, এর আগেও অনেকবার যৌতুকের দাবীতে সুমিকে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণ্যমান্য ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় সালিশ বিচারের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সংসারে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পারলে ছরওয়ার সুমির উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাত বলেও জানান তারা। নির্মম এ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবি করেন সুমির স্বজনরা। এদিকে ঘটনার পর থেকেই সুমির স্বামী ছরওয়ার আলম পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
No comments