Header Ads

Study abroad in Spain

যে কোনও বাহিনীর জন্য মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড।

  যে কোনও বাহিনীর জন্য মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কোনও বাহিনীর জন্য মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদযাপিত হচ্ছে আজ। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে একথা বলেন তিনি।

বাহিনীর শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকে দেশকে ভালোবাস। এই দেশ আমাদের।” দেশ উন্নত হলে, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, উন্নত জীবন পাবেন। চিকিৎসায় পাবেন। এই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। বাংলাদেশ যখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, সে দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। 

জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। 

দেশের ২২৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। 

জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর এই পিলখানা থেকে সারা বাংলাদেশে প্রচার করেছিল। সুবেদার মো. শওকত আলীসহ তার সঙ্গী চারজন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির পিতার ভাষণ সমগ্র বাংলাদেশের পৌঁছে দিয়েছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে সুবেদার শওকত আলীসহ চার জন ধরা পড়ার পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশ বিজিবি বাহিনীর সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে ১২ হাজার সদস্য অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৭ বীরপ্রতীক পদকে ভূষিত হন। এতো বেশি পদক বোধহয় আর কোনো বাহিনী পায়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮১৭ জন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় বাংলাদেশ একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যায়। সেই সময় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

বিজিবি সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রতি রয়েছে সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, আন্তঃসীমানা অপরাধরোধসহ নারী ও শিশু পাচার বন্ধ, সীমান্তবর্তী মানুষের জানমালের সুরক্ষা দেওয়া দায়িত্ব। আপনারা সে দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে চলেছেন। সেই দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন, সেটাই আমরা চাই।

আমাদের সীমান্ত, সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্ট করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আমাদের সীমানা নির্ধারণ করে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তখনও আমাদের সঙ্গে ভারতের ছিটমহল বিনিময় হয়নি। পচাত্তরের পরে যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসেছিল তারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরই উদ্যোগ গ্রহণ করি। দ্বিতীয়বার যখন আমরা ক্ষমতায় আসি তখন আমাদের উদ্যোগের ফলে ভারতীয় পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাস করে সীমান্ত রেখা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে, এটা আমাদের বড় অর্জন। ছিটমহল বিনিময়ের সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সার্বিক দেখাশোনা, রেজিস্ট্রেশন, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে বিজিবি। সেজন্য এ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবি বাহিনীর সফলতার জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। প্রয়োজনে নতুন আইনও পাস করি। একটি শক্তিশালী আধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এখন বিজিবি জল-স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। বিজিবি সংগঠন কাঠামোতে নতুন ইউনিট সৃষ্টির ফলে সুষ্ঠুভাবে সীমান্ত নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ অনেক সহজ হয়েছে। 

বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের, আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আধুনিক সরঞ্জামাদি সংযুক্ত হয় বিজিবির অভিযানে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত পার্বত্য সীমান্তে ১০৩৬ কিমি সড়ক নির্মাণের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী মানুষের জানমালের নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা রক্ষা সহজ হয়েছে। ১৪ হাজার ৫টি সীমান্ত পিলারে এক সময় পাকিস্তান লেখা ছিল। সেখানে এখন বাংলাদেশ লেখা হয়েছে। সেজন্য বিজিবিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে চারটি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি নতুন বিওটি সৃজন করা হয়েছে। এত করে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত সড়কের মধ্যে ৪০২ কিমি বিওপির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও ২৪২টি নতুন বিওটি সৃজন কাজ চলমান রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযান কার্যক্রমের গতিশীলতা আনতে হলে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা র‌্যাংক ব্যাচ প্রবর্তন করেছি। সীমান্ত ভাতা, যোগ্যতা অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে পদোন্নতি, জুনিয়র সদস্যদের বেতন স্কেল উন্নত করা, বাৎসরিক ছুটি দুই মাস ও আগাম বেতন প্রদান, রেশনসহ প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্যও রেশন দেওয়া হচ্ছে।

২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২২টি ব্যাচে সৈনিক পদে মোট ৩৪ হাজার ৩৬১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩৩৩৪ জনকে বেসামরিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৯২২ জন মহিলা সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার ও কলেজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি সেটি ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে সেজন্য সবাইকে আহ্বান করেছি। আমি খুশি হয়েছি বিজিবির প্রত্যেকটি বিওপি সেই কাজটি করছেন। ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশে স্মার্ট বাংলাদেশ।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.