Header Ads

Study abroad in Spain

রাজধানীর সবুজবাগ বাসাবো এলাকায় রমরমা সুদ বাণিজ্য,দেখার কেউ নেই

রাজধানীর সবুজবাগ বাসাবো এলাকায় রমরমা সুদ বাণিজ্য,দেখার কেউ নেই

 

মোঃ রাসেল সরকার// আমি ভুক্তভোগী আখি আক্তার মিতা বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে সুদে পাঁচ লাখ টাকা ৬ মাস আগে বিউটি নামের এক মহিলা কে ধার দিয়েছিলাম। এখন সেই টাকা বিউটি পরিশোধ করতে নারাজ। এদিগে সুদের টাকা না দিতে পারায় আমার মানসম্মান থাকছে না। বিউটি এখন আমার সেই টাকা দিচ্ছে না। ৫ লাখ টাকার সুদ টানতে টানতে আমি শেষ। এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।

যারা সুদের বা দাদন ব্যবসা করে, তাদের স্থানীয় ভাষায় সুদারু বলে। এই সুদের ব্যবসা যে কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে,তা সমাজের ওপরের খোলস দেখে বোঝার উপায় নেই।

রাজধানীর সবুজবাগ বাসাবো এলাকার মানুষ সংঘবদ্ধ সুদারু চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। টাকা ধার দেয়ার নামে দাদন ব্যবসায়ীরা এলাকার নিরীহ মানুষকে চুষে খাচ্ছে। প্রতি লাখে সাপ্তাহ ১০ মাসে ৪০ হাজার টাকা সুদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সবুজবাগ বাসাবো এলাকায় রানু বিউটির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সুদারু সিন্ডিকেটই এখানকার শক্তিশালী সুদ ব্যবসায়ী। তাদের টাকা আদায়ের জন্য রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

সুদের জাল পুরো সবুজবাগ বাসাবো এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। নাম গোপন রাখার শর্তে বাসাবো এলাকার কিছু মানুষ বলেন, রানু বিউটির সুদের জাল পুরো সবুজবাগ বাসাবো জুড়ে। তাদের কাছ থেকে সুদে টাকা এনে খেটে খাওয়া মানুষ আরোও নিঃস্ব হচ্ছে। তারা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপ্রতিরোধ্য? ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই শক্তিশালী চক্র। সুদ ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে সবুজবাগ এলাকার অনেক সহজ-সরল মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে এখন রাস্তায় দিনানিপাত করছেন। এদিকে অল্পদিনে সুদের ব্যবসা করে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন রানু ও বিউটি।

রানু ও বিউটির মুঠোফোনে কল দিয়ে অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সুদের ব্যবসা করিনা। কারো নামে মামলাও করিনি। পরে আবার নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি এসে আপনার সঙ্গে দেখা করছি।
ইতিমধ্যে এলাকাবাসী সুদ ব্যবসায়ী রানু ও বিউটির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন ভুক্তভোগী আঁখি আক্তার মিতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রানুর কাছ থেকে সুদে টাকা এনে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান,সুদ ব্যবসায়ী
রানুর কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে নেন চা দোকানী। পরবর্তীতে ভিটা বিক্রি করে ওই টাকার সুদসহ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, তিনি পারিবারিক সমস্যায় পরে সুদারু রানুর কাছে ১ লাখ টাকা নেন। বিনিময়ে তিনিও দিয়েছেন ব্যাংকের ফাঁকা চেক। আর প্রতি সাপ্তাহে সুদ বাবদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এভাবে তিনিও ২ বছর সুদের টাকা চালায়।

দাদন ব্যবসায়ীদের সুদ কারবারের ফাঁদে পড়ে রাজধানীর সবুজবাগ বাসাবো এলাকার মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। দরিদ্রতার অসহায়ত্বের সুযোগে সাদা চেকে সইসহ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে জমির দলিল। চেকে ইচ্ছামত টাকার সংখ্যা বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানিসহ চলে নানাভাবে নির্যাতন। সুদের জালে আটকে অনেকে হারিয়েছে বসত ভিটা, আবার অনেকে ছেড়েছেন এলাকা। অনেক নারীর ইজ্জত পর্যন্ত নিয়েছেন লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা । মান সম্মানের ভয়ে অনেকে বিচার চাওয়া তো দূরের কথা মুখ পর্যন্ত খুলতে ভয় পাচ্ছে ।

বাসাবো এলাকার অসংখ্য সাধারণ মানুষ দাদন ব্যবসায়ীদের বেড়াজালে বন্দী হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দাদন ব্যবসায়ীদের কব্জা থেকে বের হতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। ফলে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ।এক হাজার টাকা নিলে প্রতি সাপ্তাহে দাদন ব্যবসায়ীকে ৩ শৎ টাকা সুদ দিতে হয়। আবার কেউবা জমি,মেশিন, বসতবাড়ি, বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বন্ধক রেখে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছে।

দাদন ব্যবসায়ীদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাড়িতে বিরাট গুদাম ঘর রয়েছে। তাদের এসব ঘরে অসহায় মানুষদের বন্ধকীর জিনিসপত্র, দলিল এবং অসংখ্য মানুষের ব্যাংকের চেক রেখে দিয়েছে। এক সময় দাদনের টাকা সুদে আসলে কয়েকগুণ হলে তারা নির্দিষ্ট সময়ে সুদসহ টাকা ফেরত দিতে না পারার অজুহাতে সেসব জিনিস তাদের কাছে রেখে দেয়।

এ বিষয়ে রানু ও বিউটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে জানান, আমি সুদে টাকা খাটাই এটা সত্য । তবে জুলুম করিনা। কতটাকা দিলে আমার বিষয়ে সংবাদ লেখা থেকে বিরত থাকবেন। বিকাশ নাম্বার দেন। উচ্চ হারে সুদের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার কারণে অনেকের ঘুম হারাম হয়েছে। অনেকেই টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়ান। দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা দেওয়ার সময় জমির দলিল, ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। যখন কেউ টাকা ফেরত দিতে পারেনা তখন ঐ চেক ষ্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে পাওনাদারের নিকট দাবি করেন।

ভুক্তভোগী আখি আক্তার মিতা অভিযোগ করে বলেন, সুদে টাকার বিনিময়ে সুদারুকে দিতে হয় ব্যাংকের ফাঁকা চেক। সে টাকার উপর প্রতিমাসে সুদ দিতে হয়,শুধু মিতা নয় সবুজবাগ বাসাবো এলাকার মানুষ সংঘবদ্ধ সুদারুর নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ।কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এলাকার কতিপয় লোকের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুদের ব্যবসা এই এলাকায় ভয়াবহ বিষের ন্যায় ছড়িয়ে পরেছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যদি সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেই তাহলে ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। এই ব্যাপারে থানা-পুলিশেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।

সুদের হার স্থান, ব্যক্তি, ঋণের পরিমাণ এবং ব্যক্তির চাহিদার ওপর নির্ভর করে। এই সুদের হার এলাকাভেদে হাজারে সাপ্তাহে ৩০০ শৎ টাকা থেকে ৪০০ শৎ টাকা পর্যন্ত চলছে। গ্রহীতা যদি বিপদে পড়ে আসেন, তাহলে সুদের হার বৃদ্ধি পায়।

ঋণের টাকার পরিমাণ বেশি হলে অনেক সময় জমির দলিল রেখে সুদারুরা ঋণ দেয়। হতদরিদ্রদের ঋণ দেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়। যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের কাছ থেকে চেক নেয়। এমন হয়, কয়েক মাসের চেক বন্ধক রেখে চাকরিজীবীরা ঋণ নেন।

কেউ মাসিক ভিত্তিতে নিয়মিত শুধু সুদ পরিশোধ করেন, কেউ একেবারেই সুদাসল দেন। কেউ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শোধ করেন। এমনও আছে, সুদগ্রহীতা ছোট ব্যবসায়ী হলে তিনি প্রতিদিন সুদের টাকা শোধ করেন। এসব টাকা তোলার জন্য সুদারুদের লোক নিয়োগ করা থাকে।

সুদের টাকা ফেরত দিতে না চাইলে সংঘবদ্ধ মাস্তান চক্র সেই টাকা উদ্ধারে নানান কৌশলে চাপ দিতে থাকে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ,হুমকি, থামকি ,মারপিট পর্যন্ত করে থাকে। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করে সুদরুরা টাকা তোলেন। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে রানু ও বিউটি গংরা।

সরকার চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে এই সুদের ব্যবসা বন্ধ করতে পারে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এই ভয়ংকর ব্যবসার কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যাংকগুলোরও ঋণদান ব্যবস্থা এমন হওয়া দরকার, যেন সাধারণ মানুষ কখনোই সুদারুদের কাছে যাবে না। আর সুদারুদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে আর কেউ সুদের ব্যবসায় নিজেকে জড়াতে পারবে না। চলমান-পর্ব-২।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.