দীঘিনালা মাইনী নদীকে খুবলে খাচ্ছে বালুখেকোরা
দীঘিনালা মাইনী নদীকে খুবলে খাচ্ছে বালুখেকোরা
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার প্রাণ মাইনী নদীকে খুবলে খাচ্ছে বালুখেকোরা। অথচ এই নদী কেবল পরিবেশ ও যোগাযোগবান্ধবই নয়, উপজেলাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। যদিও এই দিকগুলোর সুব্যবহার বিবেচনা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে এ নদীকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে মাইনী নদীতে তিনটি সেতু রয়েছে।
পাশাপাশি হাঁচিনসপুরে আরেকটি সেতুর কাজ চলমান। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ সেতুগুলোর আশপাশ ও বিভিন্ন ঘাট থেকেই বছরের পর বছর অবাধে বালু তোলা হচ্ছে।
জানা যায়, চলতি বছরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা মাইনী বালুমহাল পাবলাখালী মৌজায় ১ একর জায়গায় বালু উত্তোলনের ইজারা নিলেও উল্লেখিত মৌজা হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ছোটমেরুং মৌজায় গিয়ে মাইনীর পাড় থেকে স্কেবেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করছে।
পাশাপাশি দীঘিনালা খেলার মাঠ সংলগ্ন ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের পুলিন হেডম্যান পাড়ায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এমনকি আরও কয়েকটি ঘাটে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতিও চলমান বলে জানিয়েছে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলছেন, যত্রতত্র মাইনী নদী হতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর মাইনীর তীরে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।
২০১০ সালে প্রণীত বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের চার নম্বর ধারার (গ) উপধারায় বলা আছে, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে এরূপ ক্ষেত্রেও বালু উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এ আইন মানার বালাই নেই ইজারাদারদের। জেলা প্রশাসনের তালিকায় দীঘিনালায় একটি বালুমহাল থাকলেও তারা তিনটি ঘাট থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন করছেন।
সম্প্রতি দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের পুলিন হেডম্যান পাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের পার্শ্বে মাইনী নদী হতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে মিনি ট্রাকের মাধ্যমে সেসব বালু পরিবহন করা হচ্ছে। একইসাথে ছোট মেরুং খাদ্য গুদাম সংলগ্ন ঘাট থেকে স্কেবেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করে একই প্রক্রিয়ায় বালু পরিবহন করছে ইজারাদাররা। দীঘিনালা খেলার মাঠ সংলগ্ন ঘাটেও একই অবস্থা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদারের প্রতিনিধি উত্তম দে জানান, ছোটমেরুং ঘাটে মাইনী বালুমহালের নামে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পুরো দীঘিনালা উপজেলা তথা ডাঙ্গাবাজার থেকে নাড়াইছড়ি পর্যন্ত তাদের সাতটি ঘাট রয়েছে।তিনি আরও বলেন, আপনাদের কোন সমস্যা থাকলে ইউএনও ও ডিসির কাছে জেনে নেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফার কাছে যত্রতত্র যেকোন ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের বৈধতা আছে কিনা এবং যদি না থাকে তাহলে এসব বালুমহালের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথায় কোথায় তোলা হচ্ছে আমাকে জানালে আমি জেলায় কথা বলবো।”
No comments